গাজীপুরের শ্রীপুরে শুটিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক অভিনেত্রীকে রিসোর্টে আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অভিনেত্রী বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে যখন শোবিজ অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা এর মধ্যেই ওই রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে দুই নারী ও রিসোর্টের বেশ কয়েকজন কর্মচারীসহ ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইদুল ইসলাম ও শ্রীপুর থানা পুলিশ যৌথভাবে উপজেলার উত্তর পেলাইদ গ্রামের রাস রিসোর্টে এ অভিযান চালায়।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর রাস রিসোর্টে যে ঘটনা ঘটছে এটাকে কেন্দ্র করে একটি মামলা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় মামলাটি তদন্ত করতে আসা হয়েছিল। এখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতও অভিযান চালিয়েছে। এখানে আসার পরও আজও অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকায় দুইজন নারীকে পাওয়া গেছে। তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে এসেছিল। কিন্তু দুইজন পুরুষ ভ্রাম্যমাণ অভিযান টের পেয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়। যেহেতু অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে রিসোর্টটি জড়িত। সবাইকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণধর্ষণের মামলায় আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে ওসি জানান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক শ্রীপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ হোটেল রেস্তোরাঁ-২০২৪ এর আইন মোতাবেক রাস রিসোর্টকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হোটেল রেস্তোরাঁর আইন অনুযায়ী ওই রিসোর্টির কোনো নিবন্ধন ছিল না।
এদিকে ভুক্তভোগী অভিনেত্রী তাছলিমা খাতুন আয়েশার অভিযোগ, শুটিংয়ের কথা বলে গত সপ্তাহে গভীর রাতে তাকে গাজীপুরের ‘রাস’ রিসোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমে পরিচালক নাসিরউদ্দিন মাসুদ ও সহকারী বাবর তাকে ধর্ষণ করেন। পরে রিসোর্ট মালিকপক্ষের লোক পরিচয় দেওয়া এক বয়স্ক ব্যক্তি তাকে আবারও ধর্ষণ করেন। ঘটনাস্থল থেকে বের হওয়ার সময় বাবর তার আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী আরও জানান, ‘প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে পূবাইলে শুটিং চলাকালে পরিচালক মাসুদ আমার নম্বর নেন। এরপর থেকে নিয়মিত ফোন দিতেন এবং দু-একটি নাটকে কাজও করেছি। সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই তিনি আমাকে ফাঁদে ফেলেন।’
২২ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাকে রিসোর্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে রিসোর্টে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেছি। প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের পাশাপাশি রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও খতিয়ে দেখা হবে।’
রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা গণমাধ্যমে দাবি করেন, ‘আমরা শুধু বুকিং দিই। রিসোর্টের ভেতরে কী হয় তা জানি না।’
এদিকে অভিযুক্ত পরিচালক নাসিরউদ্দিন মাসুদ পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ওই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসা করার পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, ‘এই মেয়ের মূল পেশা দেহ ব্যবসা। তার মামলা চালানোর ক্ষমতা নেই। ওকে কেউ চালাচ্ছে। মামলার যদি সঠিক তদন্ত করা হয় তাহলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’
ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এরকম অভিযোগ আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাছলিমা খাতুন আয়েশা ভাইরাল হওয়ার নেশায় এগুলো করছে। সে কীসের অভিনেত্রী। কোথায় কাজ করেছে। আমি ২৪ বছর ধরে থিয়েটার করি। অভিনয়ের ওপর পড়াশোনা করেছি। আর ওই মেয়ের কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। একজন নিজেকে অভিনেত্রী পরিচয় দিলেই তো হয়ে গেল না। সে ভাইরাল হতে এগুলো করছে। তাকে দিয়ে কেউ করাচ্ছে এসব।’
‘মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন এরকম একজন শিল্পী এক নাটকের সেটে তাছলিমা খাতুন আয়েশার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করে দেন। এরকম অনেকেই অনেককে পরিচয় করিয়ে দেন, অভিনয়ের সুযোগ দিতে বলেন। এই মেয়ের সঙ্গে সেভাবেই আমার পরিচয়। তাকে আমি কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম আমি একটি কাজে যাব। তখন সে বলে আপনার সঙ্গে দেখা হয় না; তাহলে আমিও সাথে যাই। তখন তাকে বলি, আমি কিন্তু অনেক দূরে যাব। সে উত্তরে বলে, অসুবিধা নাই আমি কিছু ছবি তুলব ফেসবুকে পোস্ট করতে ও রিলস বানাতে। আমরা সকালবেলা ওখানে গেছি এবং বারোটা একটার দিকে ফিরে এসেছি। কিন্তু সে যে আমাকে ফাঁসিয়ে দেবে কখনও ভাবিনি’- হতাশা প্রকাশ করে বলেন নির্মাতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ মাসুদ।
তবে ঘটনাটি শোবিজে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। নাট্যকর্মীরা এর সঠিক তদন্ত করে দোষীর বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply